তুলে নেওয়া হলো ফেসবুকের ফেস রিকগনিশন সিস্টেম

তুলে নেওয়া হলো ফেসবুকের একটি জনপ্রিয় ফিচার “ফেস রিকগনিশন সিস্টেম“। এই ফিচারটির মূল বৈশিষ্ট্য ছিল এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ফেসবুকে কোনো ছবি পোস্ট করলে সেই ছবিতে থাকা মানুষের চেহারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্যাগ হয়ে যায়। ফেসবুকে পোস্ট করা পুরাতন ছবি এবং যাবতীয় ডাটা সংগ্রহ করে রাখা হতো। পরে ব্যবহারকারীরা কোনো ছবি পোস্ট দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্যাগ হয়ে যেতো।
সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই ফিচারের মাধ্যমে কোনও ইউজারের প্রোফাইলটি খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত সহজ হয়ে যায়। ফলে নিরাপত্তার দিক নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল এই সোশ্যাল মিডিয়া জায়েন্ট ফেসবুককে। এবার সুরক্ষিত প্ল্যাটফর্ম হিসাবে নিজেকে তুলে ধরতেই নতুন এই সিদ্ধান্ত ফেসবুকের।
ফেসবুকের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিভাগের সহ-সভাপতি জেরোম পেসেন্টি একটি সংবাদ সম্মেলনে জানান, এখন থেকে ফেসবুক আর অটোমেটিকভাবে গ্রাহকদের মুখাবয়ব চিহ্নিত করবে না। এটি তুলে নেওয়ার ফলে ১০০ কোটিরও বেশি গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এমনকি মুখাবয়ব পরিচিতির ব্যক্তিগত টেমপ্লেটও সরিয়ে দেওয়া হবে। ফলে এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন গ্রাহকরা। তবে শুধু মুখাবয়ব পরিচিতি পদ্ধতি নয়, ফেসবুকের এই সিদ্ধান্তের ফলে অটোমেটিক অল্ড টেক্সট প্রয়োগ পদ্ধতিও প্রভাবিত হবে। তবে এই পদ্ধতির মাধ্যমে দৃষ্টিহীন ব্যক্তিরা ছবি সম্পর্কে ধারণা করতে পারেন।
ভাবছেন কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল? ফেসবুক জানিয়েছে, এই পদ্ধতির অনেক ভাল দিকও রয়েছে, আবার বেশ কিছু খারাপ দিকও রয়েছে। আর এই খারাপ দিকটি বিবেচনা করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মূলত এই পদ্ধতির অপপ্রয়োগের আশঙ্কা করে মুখাবয়ব পরিচিতি পদ্ধতি সরিয়ে দেওয়া হল।
প্রযুক্তির ইতিহাসে চেহারা শনাক্তকরণ সিস্টেম ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাদের এ সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, ‘ফেসবুকের দৈনিক ব্যবহারকারীদের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ আমাদের চেহারা শনাক্তকরণ ফিচারটি পছন্দ করেছে।
এটি অপসারণের মাদ্ধমে এক বিলিয়নেরও বেশি মানুষের চেহারার টেমপ্লেট মুছে ফেলা হবে।’ এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ হল সামাজিক উদ্বেগ ও ফেস রিকগনিশন প্রক্রিয়া নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনিশ্চয়তা। জেরোম পেসেন্টি বলেন, ‘সমাজে ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি সম্পর্কে অনেকের উদ্বেগ রয়েছে তাই এ চলমান অনিশ্চয়তার মধ্যে আমরা মনে করছি, ফেসিয়াল রিকগনিশনের ব্যবহারকে সীমাবদ্ধ রাখাই যুক্তিযুক্ত।’
এছাড়্রাও চলতি বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত ফেসবুকের ফটো ট্যাগিং ফিচারে ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে ফেসবুক কে এক মামলায় ৬৫০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করে।
প্রায় ১০ বছর আগে চালু করা হয়েছিল এই ফিচারটি। ফিচারটি ছিল এরকম যে, কেউ যদি ছবি বা ভিডিও পোস্ট করত তাহলে ছবিতে যে কোনও মুখকে নিজে থেকেই চিহ্নিত করত ফেসবুক। ফলে খুব সহজেই সেই ইউজারকে ট্যাগ করা যেত।
কিন্তু এই ফেইস রিকগনিশন সিস্টেম নিয়ে বহুদিন ধরেই আলোচনা চলছিল। তাই ইউজারদের সুরক্ষার কথা ভেবে শেষমেশ তা সরিয়ে ফেলা হল। যার ফলে ট্যাগ হওয়া লক্ষ লক্ষ ছবি-ভিডিও ফেসবুকের নিজস্ব ডেটাবেস থেকে মুছে যাবে। তবে আপনি চাইলে ফ্রেন্ড লিস্টের কোনও ফ্রেন্ডকে ফটো বা ভিডিওতে ম্যানুয়ালি ট্যাগ করতে পারবেন। এবং আগামি দিনে কোনও ছবি পোস্ট করলে আর আপনার মুখটি নিজে থেকেও চিহ্নিত করবে না ফেসবুক।
অন্যদিকে ফেসবুকের এই ফেসিয়াল আইডেন্টিফিকেশন ফিচার বন্ধ হয়ে যাবার ফলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে Automatic Alt Text (AAT) টেকনোলজিতে। এই বিশেষ টেকনোলজি ফেসবুক ব্যবহার করে অন্ধ বা যারা চোখে দেখতে পান না ভালভাবে, তাঁদের জন্য ইমেজ ডেসক্রিপশন তৈরিতে।
ফেসবুকের একটি পোস্ট থেকে জানা গিয়েছে যে এই AAT টেকনোলজি ফটোগ্রাফে থাকা ৪ শতাংশ মানুষকে আইডেন্টিফাই করতে পারত। তবে এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফেসবুক ইউজারের আপলোড করা ফটোগ্রাফে কতজন রয়েছে তা আইডেন্টিফাই করতে পারলেও, কে কে রয়েছে তা আইডেন্টিফাই করতে পারবে না।
প্রসঙ্গত সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থা ফেসবুকের প্যারেন্ট কোম্পানির নাম বদলে নতুন নাম হয়েছে “Meta” । প্রথম থেকেই বোঝা যাচ্ছিল যে নাম পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই বেশ কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন ঘটবে। যার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখা দিল এটি।