Guides & Tips

হ্যাক হওয়া থেকে বাঁচতে করণীয়

দিন দিন প্রযুক্তি আরো উন্নত হচ্ছে। উন্নতির ফলে ফেসবুক, টুইটার, ইয়াহু, জিমেইল ইত্যাদির মাধ্যমে সারা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হয়ে গেছে।

প্রযুক্তির ধাপ এগিয়ে যাওয়ায় যেমন সুবিধা হচ্ছে আবার অনেক অসুবিধা ও সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমান যুগে তথ্যপ্রযুক্তির সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো হ্যাকিং। প্রতিদিনই কোনো না কোনো ব্যক্তি হ্যাকিংয়ের সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে।

ফেসবুক, টুইটার, বিভিন্ন ব্যাংকের গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট এমনকি সরকারি সাইটগুলো পর্যন্ত হ্যাক হয়ে যাচ্ছে। হ্যাকিং হলো এক ধরনের সাইবার অপরাধ।

উন্নত সফটওয়্যার এবং বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে হ্যাকাররা হ্যাক করে থাকে।

হ্যাকাররা খুবই দ্রুত মানুষের কম্পিউটারে প্রবেশ করে বিভিন্ন তথ্য এবং যাবতীয় ফাইল হ্যাক করে নিতে পারে। এছাড়াও হ্যাকাররা হ্যাক করার উদ্দেশে বিভিন্ন প্রক্সি ব্যবহার করে থাকে, এতে করে তাদের ট্রেস করা ও কঠিন হয়ে যায়।

কম্পিউটার, ইন্টারনেট ইত্যাদি বিষয়ে খুব পারদর্শী থাকে হ্যাকাররা। অন্যায়ভাবে হ্যাকিং করে অন্যের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নেওয়া একটি সাইবার অপরাধ।

হ্যাকিং প্রতিরোধে  কম্পিউটার ও ইন্টারন্টে ব্যবহারকারীদের উচিত অনলাইন সিকিউরিটি অথবা ভালো এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করা।

বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় একটি ই-মেইল সার্ভিস হলো জিমেইল। গুগলের নিজস্ব এই মেইল সার্ভিসে ১০০ কোটির বেশি ইউজার রয়েছে। জিমেইলের মাধ্যমে একে অপরের সাথে তথ্য আদান প্রদান করা যায়।

তাই কারও জিমেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে যাওয়া মানে ওই ব্যক্তির ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব চ্যানেল, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এমনকি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সহ যাবতীয় সব তথ্য হ্যাক হয়ে যাবে।

তাই নিজের জিমেইল অ্যাকাউন্টে যদি কিছু সন্দেহজনক বা অস্বাভাবিক কিছু দেখেন তাহলে জিমেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে বুঝে নিতে হবে। জিমেইলের ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক। তাই এটিতেই বেশী আক্রমণ করে হ্যাকাররা।

অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধার করতে অ্যাকাউন্ট রিকভারি অপশনে ক্লিক করতে হবে। পাসওয়ার্ড মনে না থাকলে অথবা পাসওয়ার্ডে কাজ না করলে Try different option এ ক্লিক করতে হবে।

এরপর আপনার রিকভারি ই-মেইল বা মোবাইল নম্বর ব্যবহার করুন। এর পর জিমেইল আপনাকে রিকভারি কোড পাঠাবে। এই কোড মোবাইল নম্বরে আসবে। মোবাইল নম্বরে কোড পাঠানোর অর্থ হলো এই অ্যাকাউন্ট ব্যক্তির নিজের কি না সেটা নিশ্চিত করতে চায় গুগল।

রিকভারি কোড আসার পর সেটি জিমেইলে দিয়ে ভেরিফিকেশন করাতে হবে এবং সাথে সাথে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে হবে। অতঃপর গুগল সিকিউরিটি চেকের মধ্যে নেবে এবং তারপরে ইনফরমেশন পরিবর্তন করা হবে।

গুগল জানিয়েছে, অ্যাকাউন্ট যদি কোনো কারণে হ্যাক হয়ে যায় বা লগইনের তথ্য হ্যাকারদের হাতে চলে যায় তাহলে ওই ব্যক্তি ৩৬ গুণ বেশি স্ক্যামের শিকার হবে। স্ক্যাম মেইল হচ্ছে হ্যাকারদের থেকে পাঠানো ভুয়া মেইল।

তবে গুগল জানিয়েছে, জিমেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাকের ঘটনা এখন অনেক দুর্লভ। প্রতিদিন গড়ে ১০ লাখ অ্যাকাউন্টের মধ্যে মাত্র নয়টি থেকে তথ্য চুরি হয়। হ্যাকাররা বিশ্বের সব জিমেইল ব্যবহারকারীকেই লক্ষ করেই সাইবার আক্রমণ চালায় এবং জিমেইলের ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নেবার চেষ্টা করে।

অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার এক দিনের মধ্যেই হ্যাকাররা যা করার তা করে ফেলে। একাউন্ট হ্যাক হওয়ার সাত থেকে আট ঘণ্টার মধ্যেই অ্যাকাউন্টের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি হয়ে যায়।

তবে ২০ শতাংশ ই-মেইল ব্যবহারকারী এই সাত ঘণ্টা সময়ও পান না, তার আগেই মাত্র ৩০ মিনিটেই সব তথ্য চুরি হয়ে যায়। এর পর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে ই-মেইল একাউন্ট পুরোপুরি হাতিয়ে নেয় হ্যাকাররা যা পুনরায় ফেরত পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

তাই হ্যাকিং থেকে বাঁচতে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মেইলে না রাখাই ভালো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের জন্য ব্যক্তিগত ডিভাইস ব্যবহার করতে হবে। বিভিন্ন সাইবার ক্যাফের কম্পিউটার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

ই-মেইল ইনবক্সে অনেকসময় সন্দেহজনক বা ভুয়া ওয়েবসাইট থেকে বিভিন্ন লিঙ্ক পাঠানো হয়। সেই লিঙ্কগুলো কখনই ক্লিক করবেন না। এতে করে কম্পিউটার হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এ ছাড়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলার সময় যে ই-মেইল অ্যাড্রেস দেওয়া হবে তা সব সময় খোলা রাখতে হবে। এতে করে হ্যাকার যদি অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড বা ই-মেইল অ্যাড্রেস পরিবর্তন করে করতে চায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই ফেসবুক হতে ই-মেইল পাঠিয়ে দেওয়া হবে এবং একটি রিকভারি লিঙ্ক পাঠিয়ে দেওয়া হবে, এতে ক্লিক করে আইডি রিকভার করা সম্ভব হবে।

ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি অ্যাকাউন্টে টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন অপশনটি চালু রাখবেন। এতে করে হ্যাক করা কঠিন হয়ে যাবে। অবশ্যই শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। কমপক্ষে ১২ ক্যারেক্টারের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন।

এ ছাড়া ইনস্টাগ্রামের ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট প্রাইভেট রাখার অপশন রয়েছে। সেটি ব্যাবহার করতে পারেন।

এরপর ও যদি কোনো কোনো অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয় তবে স্থানীয় থানার সাইবার ক্রাইম বিভাগে জানাতে হবে। একটু সতর্কতা অবলম্বন করলেই হ্যাকিংয়ের হাত থেকে বাঁচা সম্ভব।

Leave a Reply

Back to top button